করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ৫০ শতাংশ যাত্রী বহনে সরকারের নির্দেশনায় বাস সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীতে। বিশেষ করে অফিস শুরু ও শেষ হওয়ার সময়ে এ সংকট চরম আকার ধারণ করে।
এ সুযোগে সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পোসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী।
সময়মতো বাস না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর খিলক্ষেতে সড়ক অবরোধ করেছেন শত শত যাত্রী। এছাড়া সড়কে গণপরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক যাত্রী।
সড়কে যখন এমন অবস্থা তখন নৌপথের যাত্রীদের লঞ্চ ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অতি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীদের স্থানান্তর না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এছাড়া ১১ এপ্রিলের পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অফিস-আদালতসহ কর্মসংস্থানের সব কার্যক্রম খোলা রেখে এবং পর্যাপ্ত গণপরিবহণের ব্যবস্থা না করে বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে আগের ভাড়ায় যত সিট তত যাত্রী পদ্ধতিতে ফেরত আসার দাবি জানিয়েছে।
অপরদিকে রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনের নিষিদ্ধের ঘটনায় রাজধানীর প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক, ধানমন্ডি ও শাহবাগ এলাকায় সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকরা।
এতেও ওইসব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যাত্রীদের দুর্ভোগের এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, রাজধানীতে বাসের সংকট থাকলেও দূরপাল্লার রুটে সেই সমস্যা নেই। তবে দুই আসনে একজন যাত্রী বহনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো রুটে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন পরিবহণ শ্রমিকরা।
অন্য সময়ে যাত্রী কম থাকায় সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বাসে কম ভাড়া নেয়া হতো। এখন সেই ছাড় দিতেও নারাজ পরিবহণসংশ্লিষ্টরা। আগে যে রুটে ৪৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হতো এখন সেখানে ৮০০ টাকা নেয়া হয়েছে। এতেও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
তবে করোনা সংক্রমণের চলমান প্রেক্ষাপটে সরকার জনস্বার্থে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহণের ভাড়া সমন্বয় করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, অভিযোগ পাচ্ছি অনেক পরিবহণ সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছে না। আবার অনেকেই মানছে। অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
আমি পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের অর্ধেক আসন খালি রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমন্বয় করা ভাড়ায় গণপরিবহণ চালনার আহ্বান জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী এবং নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিআরটিএ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
যাত্রীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গণপরিবহণ যেন নতুন করে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্র হিসাবে বিস্তৃতি ঘটাতে না পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে হবে।
জনস্বার্থেই অর্ধেক আসন খালি রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহণ চলছে। এ পরিস্থিতিতে অস্থিরতা প্রদর্শন না করে নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে অর্ধেক আসন খালি রেখে চলাচলের সিদ্ধান্ত মেনে চলার জন্য যাত্রী সাধারণকে আমি ধৈর্য ধারনের আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলীতে যাত্রীচাপ খুব একটা নেই। বেশিরভাগ বাস গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে দরজা বন্ধ করে গন্তব্যের দিকে চলে যাচ্ছে।
তবে মাঝপথের বাস স্টপেজ শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট ও ফার্মগেট এলাকায় শত শত মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কিছু সময় পরপর বাস থামলেই মানুষকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে।
বিশেষ করে বিআরটিসির কিছু বাসে যাত্রীদের দাঁড়িয়েও বহন করতে দেখা গেছে। ঢাকা বিমানবন্দর, মহাখালী, কাকরাইল, শাহবাগ ও ফার্মগেট এলাকায় বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে দীর্ঘ সময় বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা সকালে ক্ষিলখেতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভও করেছেন।
এদিন সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা খিলক্ষেত এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক আটকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় দুই পাশের সড়কে কয়েকশ’ ছোট-বড় গাড়ি আটকা পড়ে।
পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। জিয়াউর রহমান নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সকালে অফিস টাইমে লোকজন বাসে উঠতে না পেরে কিছুক্ষণ রাস্তা আটকে রাখে। বুধবারও একই ঘটনা ঘটেছিল।
তিনি বলেন, উত্তরা বা গাজীপুর থেকে যেসব গাড়ি আসে সেগুলোতে যাত্রী বোঝাই করে দরজা আটকানো থাকে। খিলক্ষেত ও আশপাশ এলাকার যাত্রীরা বাসে উঠতে পারেন না।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। সোলাইমান মিয়া নামের একজন বলেন, সরকারের উচিত ছিল খিলক্ষেত থেকে কয়েকটি রুটের জন্য বিআরটিসির বাস বরাদ্দ দেয়া। তাহলে এসব ভোগান্তি হতো না।
খিলক্ষেত থানার এসআই শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী বহনের নিয়ম করা হয়েছে। ফলে সকালে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পুলিশ গিয়ে যাত্রীদের বাসে উঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাস্তা আটকে রাখে বলে জানান তিনি।
মিরপুরের যাত্রী মো. শিহাবউদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর ১০ নম্বরে প্রায় ১ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাইনি। যাত্রা শুরুর থেকেই বাসগুলো যাত্রী ভরে নিয়ে আসছে।
বাসের এমন সংকটের সময়ে টেম্পোতে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। তিনি বলেন, মিরপুর-২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাদুড়ঝোলা হয়ে গেছি। আগে এপথে ১২ টাকা ভাড়া নিত। এখন তা বেড়ে ২০ টাকা আদায় করছে।
বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে টেম্পোতে যেতে হয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ করে আরও কয়েকজন যাত্রী বলেন, বাসের সংকটের সুযোগে সিএনজি অটোরিকশাগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।
দূরপাল্লার রুটে আরও ভোগান্তি : বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও বাস টার্মিনালে তার ছাপ দেখা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। বাস টার্মিনালে অবাধে ভিক্ষুক, হকার ও সাধারণ মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে।
আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়াও। গাবতলী থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত পূর্বাশা, রয়েল ও চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহণের বাসে সাধারণ সময়ে ৪৫০ টাকা ভাড়া নেয়া হতো।
বৃহস্পতিবার ওই পথে ৮০০ টাকা নিতে দেখা গেছে। বরিশালের রুটে সাকুরা পরিবহণের বাসে আগে ৫০০ টাকা নেয়া হলেও এখন ৮০০ টাকা, খুলনা পর্যন্ত সোহাগ ও একে ট্রাভেলস বাসের ৫৫০ টাকা নেয়া হলেও এখন ৮৫০ টাকা আদায় করা হয়।
ঝিনাইদহের যাত্রী মো. আকরাম অভিযোগ করে বলেন, স্ত্রীকে নিয়ে ঝিনাইদহ যাব। আমাদের চারটি টিকিট কিনতে বাধ্য করা হয়েছে।
অথচ আমরা পাশাপাশি দুই সিটে বসেছি। তিনি বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে একই পরিবারের সদস্য হয়েও প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় করতে হলো।
ধানমন্ডি, শাহবাগ ও প্রেস ক্লাবের সামনে অবরোধ : করোনা পরিস্থিতির কারণে রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকরা।
রাজধানীর ধানমন্ডি, শাহবাগ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার পরে তারা অবস্থান নেন। এ সময় তিন এলাকায় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে পুলিশ এসে চালকদের শান্ত করলে তারা দুপুর ১২টার পর রাস্তা ছেড়ে দেন। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।
মোটরসাইকেল চালকদের অভিযোগ, বুধবার হঠাৎ করেই অ্যাপসে রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বৃহস্পতিবারও উবার, পাঠাওসহ বিভিন্ন অ্যাপে রাইড শেয়ারিং চালু ছিল।
তারা রাইড শেয়ারিং করলেই পুলিশ মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মোটরসাইকেল চালক মো. হাফিজুর রহমান মামলার স্লিপ দেখিয়ে বলেন, ভাড়ায় যাত্রী বহনের অপরাধে মতিঝিলে পুলিশ গাড়ি আটকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, একদিনে কত টাকা আয় করি, এভাবে জরিমানা করে মামলা দেবে। একই ধরনের স্লিপ দেখিয়ে আরেক চালক আরিফ বলেন, আমার গাড়ির সব কাগজ ঠিক আছে।
শুধু পেছনে যাত্রী বহনের দায়ে এক হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দিল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে সব ধরনের গাড়ি চলে। যাত্রী বহন করা হচ্ছে। সিএনজিতে একই সঙ্গে তিনজন যাত্রী উঠছেন। তাহলে রাইড শেয়ারিংয়ে চালকদের দোষ কোথায়?
ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে প্রধান সড়কে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল আড়াআড়ি করে রেখে রাস্তা করে দেয়। একইভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে দুই থেকে তিনশ’ মোটরসাইকেল হর্ন বাজিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানান।
পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা প্রেস ক্লাব থেকে সরে শাহবাগ এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন।
যত আসন তত যাত্রী বহনের দাবি যাত্রীকল্যাণ সমিতির : অফিস আদালতসহ কর্মসংস্থানের সব কার্যক্রম খোলা রেখে ও পর্যাপ্ত গণপরিবহণের ব্যবস্থা না রেখে গণপরিবহণে অর্ধেক যাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
আগের ভাড়ায় যত সিট তত যাত্রী পদ্ধতিতে ফেরত আসার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সাথে রাইড শেয়ারিংরের মোটরসাইকেল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সব শ্রেণির গণপরিবহণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কঠোরভাবে অনুসরণ চালক, যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানায়।
অন্যথায় কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি গণপরিবহণের ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী দুর্ভোগের যাবতীয় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, করোনা সংকটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ চালানোর জন্য বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও এখন দেশের অধিকাংশ গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
সিটি সার্ভিস ও শহরতলির বাস, হিউম্যান হলার, অটোটেম্পোসমূহে বর্ধিত ভাড়া নিয়ে সেই পুরোনো কায়দায় গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হচ্ছে।
এতে কর্মজীবী, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের সাধারণ লোকজন, কর্মহীন ও আয় কমে যাওয়া দেশের সাধারণ মানুষের যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়াও সব অফিস আদালত খোলা থাকায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে সিটি সার্ভিসের বাসগুলো চলাচলের ফলে রাস্তায় প্রতিটি বাসস্টপেজে শত শত যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অপেক্ষা করে গণপরিবহণ পাচ্ছে না।
এতে করে নারী, শিশু, অসুস্থ রোগী ও অফিসগামী যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছে। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বাড়তি ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করে প্রতিটি রুটে চলাচলকারী গণপরিবহণে যাত্রী-শ্রমিক বশচা (গ্যাঞ্জাম), হাতাহাতি, মারামারি চলছে।
লঞ্চযাত্রা : লঞ্চের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌমন্ত্রণালয়। তবে কেবিনের ক্ষেত্রে কোনো ভাড়া বাড়ছে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ সময় নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই এই ভাড়া কার্যকর হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনার মেয়াদ অনুযায়ী আগামী ২ সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত ভাড়া কার্যকর থাকবে।
৬০ শতাংশ বাড়ার পর এখন লঞ্চের ডেকের ভাড়া হয়েছে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য জনপ্রতি এক কিলোমিটারে ২ টাকা ৭২ পয়সা।
১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব, অর্থাৎ ১০০ কিলোমিটার পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য জনপ্রতি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ২৪ পয়সা।
এছাড়া জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়া বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন উল্লেখ করে নৌপ্রতিমন্ত্রী বলেন, যদিও লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা খুব দুঃসাধ্য ব্যাপার, কঠিন কাজ।
লঞ্চের নকশাটা এমনভাবে তৈরি করা সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কঠিন।
আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে অনেক পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। সর্বশেষ আমরা সেটাকে ধরে রাখতে পারিনি, এটাই হচ্ছে সত্য কথা ও বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে গেলে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এটা বৃদ্ধি করতে হবে। মালিকরা সম্মত হয়েছে তারা ক্যাপাসিটির অর্ধেক যাত্রী পরিবহণ করবেন।
সেজন্য আমরা যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করেছি। যে বৃদ্ধিটা কেবিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এটা আমরা অনুমোদন করেছি।
ভাড়া বাড়লেও লঞ্চের সংখ্যা বাড়ছে কি না-এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের লঞ্চের সংকট আছে। আমরা গতকালও যাত্রী সাধারণকে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে, প্রয়োজন না হলে আমরা যাতে স্থানান্তর না হই।
শক্তি প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যবিধি মানানো কঠিন ব্যাপার। সবাই সচেতন না হলে এটা খুব কষ্টসাধ্য। লঞ্চ মালিকরা বলেছেন, সব লঞ্চই তারা যাত্রীসেবায় নিয়োজিত করবেন। যাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা যায়।
খালিদ মাহমুদ বলেন, ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য আমরা মালিকদের কঠিনভাবেই বলেছি। এটা করা হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা সহজ হবে।
সেই বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা একটা কল সেন্টার পাইলট আকারে চালু করেছি, আমরা দেখেছি সেটার সঙ্গে মানুষ যুক্ত হচ্ছে।
১১ এপ্রিলের পরও টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত : ১১ এপ্রিলের পরের ট্রেনের টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ১১ এপ্রিলের পর থেকেও ১০৪টি আন্তনগর ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে।
বাংলাদেশে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব ট্রেনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করব। ট্রেন বন্ধের সরকারের নির্দেশনা এলে তা পালন করব।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ‘ট্রেনের অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
তবে মাঠপর্যায়ে কর্মরত রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের করোনা সুরক্ষা সামগ্রী নেই বললেই চলে। তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। দ্রুত সুরক্ষা সামগ্রী প্রয়োজন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।